রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
ProdhanKhabor | Popular NewsPaper of Bangladesh
রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস পরিবর্তন হচ্ছে: ভিসি ১৬ বছরপর উন্মুক্ত মাঠে অনুষ্ঠিত হলো দাউদকান্দি জামায়াতের কর্মী সম্মেলন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাদেকপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা মানবিক মালীগাঁও ইউনিয়নের আয়োজনে নিহতদের স্মরণে দোয়ার অনুষ্ঠান দাউদকান্দি উপজেলা জামায়াতের কমিটি গঠন বাহলুল-আমীর, মনিরুজ্জামান-সেক্রেটারী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশার উদ্যোগে নবীনগরে ফিজিওথেরাপি ক্যাম্পের উদ্বোধন দিল্লি বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে: মাসুদ সাঈদী ইসরায়েলের ৫ সামরিক ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর রকেট হামলা হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির উদ্যোগে দাউদকান্দিতে বহুমুখী কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন দাউদকান্দি উপজেলা ও পৌরসভার নবনির্বাচিত আমীরদ্বয়ের শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে রুকন সম্মেলন দোয়া কবুলের উত্তম সময় জুমার দিন | প্রধান খবর সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তন হবে: সাংবাদিকনেতা মোশারফ দ্যা অ্যাকাউন্ট্যান্টস ক্লাবের এজিএম অনুষ্ঠিত নৈয়াইর সায়েন্স স্কুল এন্ড কলেজে কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত সাকিব আল হাসানের সকল ব্যাংক হিসাব জব্দ রংপুরে জামায়াতের হিন্দু শাখার কমিটি গঠন | প্রধান খবর সোনাগাজী রিপোর্টার্স ইউনিটির কমিটিতে সভাপতি ইকবাল-সম্পাদক সাব্বির | প্রধান খবর প্রতিরোধের মুখে ইরানে হামলার সমাপ্তি ঘোষণা ইসরায়েলের আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত | প্রধান খবর বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ

মাথিনের কূপ: ইতিহাসে চাপা পড়া পুলিশ ও জমিদার কন্যার বেদনাময় "এক প্রেমের স্মৃতি

মাথিনের কূপ: ইতিহাসে চাপা পড়া  পুলিশ ও জমিদার কন্যার বেদনাময় "এক প্রেমের  স্মৃতি
জায়গাটি স্থানীয়ভাবে ‘মাথিনের কূপ’ নামেই পরিচিত। কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থানার কম্পাউন্ডে অবস্থিত এই স্থানটি। শত বছর আগে এলাকার একমাত্র বিশুদ্ধ পানির কূপ হিসেবে পরিচিত ছিল এটি। নিত্য ভোরে কলসি নিয়ে সখিদের সঙ্গে এখানেই পানি নিতে আসতেন এক কিন্নরকণ্ঠী তরুণী।

দেখতেও বেশ, আবার চেহারায় বাঙালিয়ানার ভাব। আর শীতের কুয়াশা মাখা সকালে কোনও একজোড়া প্রেমিক চোখে যদি ধরা পড়ে সেই চাহনি! সব মিলিয়ে একটি প্রণয়োপাখ্যান সৃষ্টি হওয়ার জন্য যে পরিবেশ ও অনুসঙ্গ প্রয়োজন ছিল, সবকিছুর সমারোহ ঘটছিল যেনো।

এরপর যা হওয়ার তাই হলো। তৎকালীন রাখাইন জমিদারের আদরের রাজকন্যা মাথিনের সঙ্গে প্রণয় জমে উঠলো বাঙালি পুলিশ অফিসার ধীরাজের। শিশরি ভেজা সকালে বেলি ফুল দেখার জন্য কম্পাউন্ডে বসা ধীরাজের সঙ্গে চোখাচোখি শুরু হলো পানি নিতে আসা মাথিনের।

চাকরির প্রয়োজনে টেকনাফে আসা একজন পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় প্রকৃতিকন্যার প্রেম জমে উঠলো ক্রমেই। তবে অবশেষে বিরহেই হলো এর পরিণতি।   যুগ যুগ ধরে সেই প্রেমগাথা নিয়ে রচিত হতে শুরু করলো অজস্র গীতিনাট্য, কাব্য, উপন্যাস।

বাংলা সাহিত্যে এক অনুপম প্রেমিকা হিসেবে স্থান করে নিলেন ‘মাথিন’। তাই প্রায় শতবছর পরে এসেও মানুষের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ‘মাথিনের কূপ’ নামে পরিচিত সেই থানা কম্পাউন্ডের কূপটি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোকমুখে ও পরবর্তীতে সাহিত্যে অমর হয়ে ওঠার কারণে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থানা কম্পাউন্ডে অবস্থিত এই কূপটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসেন মানুষ। কূপে জল নেই আর আগের মতো।

কূপের চারপাশে ফলগাছ ও বৃক্ষরাজি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সজ্জিত প্রাঙ্গণের মধ্যে ছাউনিতে ঢাকা কূপের নিথর জলের দিকে তাকালে এখনও মানুষের মনে খেলে যায় হিম শীতল অনুভূতি।

জানা যায়, ধীরাজ ভট্টাচার্য ১৯০৫ সালে ৫ নভেম্বর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় ইস্ট বেঙ্গলের যশোর জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯২৩-১৯২৪ সালের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে কক্সবাজারের টেকনাফে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেসময় থানার কূপ থেকে জল নিতে আসা স্থানীয় রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিনের সঙ্গে তার হৃদয় বিনিময় হয়।

এরপর হঠাৎ একদিন বাবার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে ছুটি নিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে কাউকে কিছু না বলে, মতান্তরে একমাসের কথা বলে কলকতায় ফিরে যান তিনি। পরে আর চাকরিতে যোগ দেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। তাই মাথিনের কাছেও আরও ফিরে আসা হয়নি।

এদিকে মাথিনও তাকে ছাড়া জল-খাবার মুখে তুলবেন না বলে পণ করেন। এক পর্যায়ে অনাহারে বিরহ যাপন করতে করতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রেমের কারণে শীর্ণ-জীর্ণ হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করলেন বর্ণাঢ্য জমিদার কন্যা।   

পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে লাহোরের ইউনিক পাবলিকেশন্স থেকে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ প্রকাশ করেন ধীরাজ ভট্টাচার্য। এই বইয়ে তিনি নিজেও লিখেছেন মাথিন প্রসঙ্গে। এই গ্রন্থে মূলতঃ ধীরাজ-মাথিনের ঐতিহাসিক প্রেমের কাহিনী ফুটে উঠেছে। সেই থেকে ধীরে ধীরে এই টেকনাফের কূপটি মানুষের নজরে আসতে শুরু করে।

টেকনাফ মাথিন কূপের উৎস সন্ধানকারী আবদুল কুদ্দুস রানা বলছেন, ‘ঘটনাটি সত্য প্রেমের বেদনার্ত অধ্যায়। এই অধ্যায় তুলে ধরতে ১৯৮৪ সালে একটি সাইন বোর্ড টাঙিয়ে মাথিনের কূপটি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।’

কূপটি সংরক্ষণের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘আমি তখন স্কুল ছাত্র। কলকাতা থেকে কিছু সাংবাদিক টেকনাফে আসছিল। তখন তারা সঙ্গে করে কিছু বই নিয়ে আসছিল। ওই বইটির নাম ছিল ‘‘যখন পুলিশ ছিলাম’’। এই বইয়ের কোনও কভার ছিল না।

বইটির ভেতরে তিন-চার পৃষ্ঠায় ধীরাজের লেখা একটি চিঠি ছিল। ঐতিহাসিক মাথিনের কূপের এই কাহিনীটি জানার পরে আমি তখন বাঁশের বেড়া দিয়ে মোড়ানো কূপটিতে ১৭৫ টাকা খরচ করে একটি টিনের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিলাম।

সেই লাগানো থেকে আজকের মাথিনের কূপ সংরক্ষিত হয়ে উঠেছে। এখন প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ লাখ পর্যটক মাথিনের কূপ দেখতে আসেন। টেকনাফ মানে মাথিনের কূপ, মাথিনের কূপ মানে টেকনাফ।’ মাথিনের কূপে ধীরাজের আবক্ষ মূর্তি ‘বিষাদ আর বেদনাবিধুর এক অমর প্রেমের গল্প ধরে রাখতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টেকনাফের মাথিনের কূপের পাশে ধীরাজের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের পাশাপাশি স্মৃতি সংরক্ষণেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

ইতোমধ্যে মাথিনের কূপটি নানাভাবে সংস্কারের আওতায় নিয়ে এসে পর্যটকদের তীর্থস্থান হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে।’ কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এই কূপটির সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণ, ফুলের বাগান, সৌন্দর্য বর্ধিত রাস্তা নির্মাণ, চেরাংঘর মেরামত ও কূপের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। রঙিন সাজে সাজানো হয়েছে কূপটি। এতে করে পর্যটকরা আরও বেশি মুগ্ধ হচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন।

উল্লেখ্য, টেকনাফ ত্যাগের পর পুলিশের চাকরি ছেড়ে ১৯২৫ সালে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন ধীরাজ ভট্টাচার্য। তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি ‘সতীলক্ষী’। এছাড়াও তার অভিনীত বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এরমধ্যে ১৯২৯ সালে ‘গিরিবালা’, ১৯৩০ সালে ‘কাল পরিণয়’ ও ‘মৃণালীনী’ এবং ১৯৩২ সালে ‘নৌকাডুবি’ সহ ৫৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন ধীরাজ।

১৯৫৮ সালে তার অভিনীত শেষ সিনেমাটি মুক্তি পায়, ছবিটির নাম ‘নীলাকঙ্গা’। চলচ্চিত্রের অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি দুটি আত্মজীবনীমুলক গ্রন্থও রচনা করেছেন। একটির নাম ‘যখন পুলিশ ছিলাম’, আরেকটি হলো ‘যখন নায়ক ছিলাম’।  

পিকে/এসপি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস পরিবর্তন হচ্ছে: ভিসি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস পরিবর্তন হচ্ছে: ভিসি